প্রতি বছরের মতো, এবছরও শুরু হচ্ছে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা। তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে আয়োজিত এ ইজতেমা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সম্মেলন। তুরাগ তীরের ইজতেমা মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যের ডাক দেয়। ভ্রাতৃত্ব, একতা, সাম্য ও শান্তির বার্তা উপহার দেয়। প্রতি বছরের মতো এবারও অনেক দেশের মুসলমান ইজতেমায় অংশগ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন। অংশ নিচ্ছেন তাবলিগ জামাতের দাওয়াতি কার্যক্রমে।
"দাওয়াত" শব্দটি আরবি, এর আভিধানিক অর্থ আহ্বান করা। ইসলামে দীনহারা মানুষকে দীনের দিকে বা ইসলামের দিকে আসার আহ্বান জানানকে দাওয়াত বলা হয়। বস্তুত, আত্মবিস্তৃত মানব জাতিকে এক আল্লাহর পথে আহ্বান করাই ছিল নবী-রসুলগণের প্রধানতম দায়িত্ব। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পবিত্র কোরআন মাজিদে দাঈ হিসেবে উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: "আল্লাহর অনুমতিক্রমে তার দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি" (সূরা আহযাব-৩৩:৪৬)। বিশ্ব ইজতেমা দাওয়াতি কার্যক্রমের মহামিলন মাহফিল। আল্লাহর মনোনীত পথে মানবজাতিকে পরিচালিত করার জন্য দুনিয়ার প্রথম মানব ও নবী হজরত আদম (আ.) থেকে সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত ১ বা ২ লাখ ২৪ হাজার নবীর আগমন ঘটেছে পৃথিবীতে। তারা আল্লাহ নির্দেশিত সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের কাফেলায় মানুষকে সঙ্গী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। নবুয়তের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এ দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীদের ওপর। মহানবীর বিদায়ের পর থেকে পর্যায়ক্রমে এ দায়িত্ব খোলাফায়ে রাশেদিন, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন, তাবেতাবেইন, সলফে সালেহিন, আলেম-ওলামা ও পীর মাশায়েখগণ পালন করে আসছেন। দিল্লির মেওয়াতে দারুল উলুম দেওবন্দের মুরব্বি মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ১৯২৬ সালে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ শুরু করেন, যার সম্প্রসারিত রূপ আজকের টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমা। এক আল্লাহর প্রতি ইমান আনা এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সৎ কাজ করা ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখাই এ দাওয়াতের মুখ্য উদ্দেশ্য। দাওয়াতি কাজের এ দায়িত্বটি তাবলিগ জামাতের মুরব্বিরা বেছে নিয়েছিলেন পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের আলোকে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আমি চাই তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক, যারা মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করবে, ভালো কাজের আহ্বান করবে, আর মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। ওই দলটাই হলো সফলকাম।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১০৪)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও দাওয়াতি কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিদায় হজের ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘আমার পর আর কোনো নবী আসবে না। অতএব, আমার একটি বাণী হলেও অন্যের কাছে পৌঁছে দাও।